দাগনভূঞার পরিচিতি দাগনভূঞা একটি প্রাচীনতম জনপদ। তেরশ শতকে গোড়াপত্তন হওয়া ভুলুয়া রাজ্যের শাসিত অঞ্চল ছিল এটি। এর পূর্ব নাম গোপীগঞ্জ। কথিত আছে, প্রখ্যাত জমিদার শ্রী অরুণ সিং বাহাদুরের স্ত্রীর নাম ছিল শ্রী গোপীদেবী। তিনি স্বামীর জমিদারির দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাঁর নামানুসারে জমিদারী স্টেট গোপীগঞ্জ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট শাহাজাহানের দ্বিতীয় পুত্র শাহাজাদা সুজার আমলে (যিনি ১৬৩৯-১৬৬০ সাল পর্যন্ত বাংলার সুবেদার ছিলেন) বারভূঁঞাদের কোনো এক উপবংশের ও মাতুভূঁঞা ও দাগনভূঁঞা নামে দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ওই সময় ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। মাতুভূঁঞা ও দাগনভূঁঞা এই দুই ব্যক্তির একজন বর্তমানে মাতুভূঞা ভূঁঞা বাড়িতে এবং অপরজন দাগনভূঁঞা দিঘীর আশেপাশে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন বলে ধারনা করা হয়। যাঁর নামানুসারে এলাকাটি ও দাগনভূঁঞা হিসেবে খ্যাতি পায়। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ উদ্দোলাকে সরিয়ে ইংরেজরা বাংলাসহ পুরো ভারতবর্ষের দখল নেয়। ১৮৭৬ সালে বৃটিশ সরকারের প্রশাসনিক প্রয়োজনে গঠিত নোয়াখালী জেলার অধীনে ‘দাগনভূঞাকে ফেনী মহকুমার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে ফেনী সদর থানা থেকে আটটি ইউনিয়নকে কর্তন করে দাগনভূঞাকে থানা হিসেবে রূপান্তর করা হয়। ১৯৮৪ সালে বৃহত্তর নোয়াখালীকে ভেঙ্গে ফেনীকে জেলায় রূপান্তর করা হয় এবং এর আগে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের আওতায় ১৯৮৩ সালে দাগনভূঞা থানাকে আপ-গ্রেড করে দাগনভূঞা উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ভৌগলিক অবস্থান দাগনভূঞার উত্তরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট,দক্ষিণে ফেনীর সোনাগাজী ও নোায়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ,পূর্বে ফেনী সদর এবং পশ্চিমে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা অবস্থিত। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থানগত দিক বিবেচনায় দাগনভূঞাকে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার প্রবেশদ্বারও বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ- বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্রগ্রামের সাথে খুলনা,ভোলা,বরিশাল,চাঁদপুর,নোয়াখালী,লক্ষ্মীপুরসহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সহজ যোগাযোগের সেতুবন্ধ হলো এই দাগনভূঞা। ১টি পৌরসভা,৮টি ইউনিয়ন, ১০০টি মৌজা ও ১৫২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় মোট লোকসংখ্যা দুই লাখ ১৬ হাজার ২৩৩ জন। উপজেলার আয়তন ১৪১.৭১ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রবাহমান ফেনী নদী। এখানে জন্ম নিয়েছেন জাতির অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তান। যাঁদের উত্তরসূরী হতে পেরে এই উপজেলার জনগণ যেমন গর্বিত তেমনি এ জনপদও ধন্য। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধসহ জাতীয় বিভিন্ন ঐতিহাসিক আন্দোলন-সংগ্রামে এখানকার বীর সন্তানেরা রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ভাষা শহীদ আবদুস সালাম, সুফি সাধক দেওয়ান হাফেজ আবদুর রশিদ, পাকিস্তান আমলের মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য রহিম উল্যাহ, সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী, ড. ফেরদৌস কোরশী, সাবেক আইন সচিব আমিন উল্যাহ,হেড মাষ্টার জালাল আহমেদ, খ্যাতিমান শিল্প উদ্যোক্তা আবদুল আউয়াল মিণ্টু, এয়ার ভাইস মার্শাল এজি মাহমুদ, এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, নির্বাচন কমিশনার আবদুর রশিদ, খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ নুরুন নবী চৌধুরী,বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়নবোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল(অব.) মঈন উদ্দিন চৌধুরী কাজল,রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদাসহ আরও অনেকে। দাগনভূঞা পৌরসভা দাগনভূঞা উপজেলার সদর,মাতুভূঞা ও রামনগর ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে ২০০০ সালে দাগনভূঞা পৌরসভা গঠিত হয়। নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরভার লোকসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার জন। পৌরভার আয়তন ১২.২৫ বর্গকিলোমিটার। শিক্ষার হার প্রায় ৭৫%। ২০০৪ সালে এই পৌরসভা তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ২০১২ সালে বর্তমান মেয়র ওমর ফারুক খানের প্রথম মেয়াদে তাঁর জনবান্ধব কর্মপরিকল্পনা ও প্রত্যাশিত উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা লাভ করে। দাগনভূঞা পৌরসভার উন্নয়নের কান্ডারী,বারবার নির্বাচিত সফল ও জননন্দিত মেয়র ওমর ফারুক খানের বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে পৌরভার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড দ্রুত এগিয়ে চলছে। মেয়র ফারুক খানের জোর আশাবাদ, একটি আধুনিক ও তিলোত্তমা নগরী হিসেবে দাগনভূঞা পৌরসভা হবে দেশের রোল মডেল। › শওকত মাহমুদ. ২৬ জুন ২০১৮